শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার ॥
কক্সবাজারের সমুদ্র উপকূলে অতিথি পাখির আগমন আগের চেয়ে বেড়েছে। বিশেষকরে দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনসহ বিভিন্ন প্রান্তে দলে দলে বাসা বাঁধছে নানা দেশের অতিথি পাখি। তবে বিপদগ্রস্থ পরিবেশের কারণে স্থানীয় অনেক পরিচিত পাখি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে।
শীতের আগমনী বার্তার শুরুতে ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, সাইবেরিয়া, মধ্য এশিয়া, রাশিয়া ও মিয়ানমার উপর দিয়ে হাজার হাজার মাইল পথ অতিক্রম করে অতিথি পাখির দল কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকা, সেন্টমার্টিন দ্বীপ, সোনাদিয়া দ্বীপ, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, কক্সবাজার সদরের খুরুস্কুল, ভারুয়াখালী, ইনানী, হিমছড়ি, চৌফলদন্ডী, পোকখালী, ছিরাদিয়া, টেকনাফের সৈকত পাড় ও নাজিরারটেকে হাজির হচ্ছে প্রতিদিন। সমুদ্র সৈকত জুড়ে বেড়েছে অতিথি পাখির বিচরণ।
বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এখন বাসা বেঁধেছে উপকূলীয় প্যারাবন ও গ্রাম অঞ্চলের গাছ গাছালিতে। বক, চখা-চখি, ঘুঘু, চেঘা, গাংচিল, শঙ্খচিল, পেলিক্যান, ডাভ, ভাদিহাস ও বালিহাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখতেও দর্শনার্থীরা প্রতিদিন ভীড় জমাচ্ছেন অতিথি পাখি অধ্যুষিত উপকূলীয় এলাকাগুলোতে। ঝাঁকে ঝাঁকে এই পাখি দূরদেশ থেকে এসে সেন্টমার্টিন দ্বীপের হোটেলের কটেজের ছাদে, গাছের ডালে, পর্যটকবাহী জাহাজের ছাদে ও সাগরের বিভিন্ন খুঁটিতে বসে আপন মনে গান গাইছে। এদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠছে পুরো সেন্টমার্টিন দ্বীপ। গত প্রায় ১২ বছর ধরে এই অতিথি পাখিরা বাংলাদেশে আসতে শুরু করে বলে জানান স্থানীয়রা। বাতাসে শীতের বার্তা শুরুর পর থেকেই এই পাখিদের আগমন ঘটতে থাকে ।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা মোহাম্মদ টুলু ও জেলেদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১০/১২ বছর ধরে এখানে দেশী-বিদেশী পাখিদের আনাগোনা চোখে পড়ে। পোকা, ছোট মাছ শিকার করে খেতে দেখা যায় এই অতিথি পাখিদের।
স্থানীয়রা বলেন, শীতের তীব্রতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এদের সংখ্যাও যেন বাড়তে থাকে। শীত শেষ, পাখিরাও ফিরে যায় আপন নীড়ে।
কক্সবাজারের দরিয়ানগর, মহেশখালীর সোনাদিয়া ও টেকনাফের সেন্টমার্টিনে অতিথি পাখি আসার কথা নিশ্চিত করে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সর্দার শরীফুল ইসলাম বলেন, আমাদের টিমের সদস্যরা পাখি আসার খবর দিয়েছে। হাঁস প্রজাতির পাখি, জলচর পাখিও এসেছে। তবে আরও কী কী পাখি আসছে তা দেখতে খুব শিগগিরিই এসব এলাকায় যাবে পরিবেশ অধিদফতরের জীববৈচিত্র সংরক্ষণ দল।
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সর্দার শরীফুল ইসলাম জানান, পাখি শিকার ও নিধন নিষিদ্ধ হলেও এখনও বিভিন্ন স্থানে নির্বিচারে পাখি শিকার করা হচ্ছে। এদের আবাসস্থল ধ্বংস করা হচ্ছে। এতে দেশীয় অনেক প্রজাতির পাখি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। জনগণের সচেতনতা প্রশাসনসহ সংশিল্গষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ ভূমিকা বিপদাপন্ন পাখির প্রজাতিকে রক্ষা করতে পারে। তিনি বলেন, পরিবেশ বন জীববৈচিত্র রক্ষায় পাখি বাঁচানো এবং তাদের খাদ্যসহ আবাসস্থল রক্ষা করা প্রয়োজন।
পাঠকের মতামত: